আউশগ্ৰামের সদাই ফকিরের পাঠশালা এসে দাঁড়ালো থ‍্যালাসেমিয়া আক্রান্ত পড়ুয়াদের পাশে

31st January 2020 বর্ধমান
আউশগ্ৰামের সদাই ফকিরের পাঠশালা এসে দাঁড়ালো থ‍্যালাসেমিয়া আক্রান্ত পড়ুয়াদের পাশে


শিক্ষাদানের পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কাজেও এগিয়ে আসেন বারবার। আউশগ্রামের রামনগর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায়কে এক ডাকে সকলেই চেনেন। 
শুক্রবার রামনগর গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল এই সাহায্য। শিক্ষক জীবন থেকে অবসর গ্রহনের পর শুরু করেন টিউশন পড়ানো। তবে ছাত্র ছাত্রীদের পড়ানোর জন্য নেন বছরে গুরুদক্ষিনা হিসাবে ২ টাকা। বর্তমানে তাঁর ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ৩০০ র বেশি। তাঁর পাঠশালার নাম  ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা,। এই পাঠশালা পড়ুয়ারা সবাই ১০০ টাকা করে তাদের মাস্টারমশাইয়ের হাতে তুলে দেন। বাকি টাকা সুজিতবাবু দিয়েছেন নিজের পেনশন থেকে। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের অনেকেও সুজিতবাবুর এই মহৎ উদ্যোগের শরিক হয়েছেন। শুরু টা হয়েছিল ২০১৬ সালে। রামনগর গ্রামে ছোটন থান্দার নামে বছর ছয়েকের এক শিশু থ্যালাসেমিয়াই আক্রান্ত হয়েছিল। সেই বছর ডিসেম্বর মাসে ছাত্র ছাত্রীদের পিকনিক করার কথা ছিল। কিন্তু ছাত্র -ছাত্রীরা পিকনিক না করে মাষ্টার মশাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিলেন পিকনিকের ২৫ হাজার টাকা। সেই টাকা তুলে দেওয়া হয়েছিল রামণগর গ্রামের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু ছোটন থান্দারের মায়ের হাতে। সময় বেড়েছে সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। তারপর ২০১৮ সালে ছাত্র ছাত্রীরা পাশের গ্রামে আরো দুজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তের খবর পায় সুজিত বাবু।  কয়েকবছর যাবৎ  সুজিতবাবুর উদ্যোগে শুরু হয়েছে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা শিবির ও আক্রান্তদের সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা। প্রতিবছর সরস্বতী পুজোর পরে একটি দিন ঠিক করে এই শিবিরের আয়োজন করা হয়। শিবিরের সমস্ত ব্যবস্থাপনা করে পড়ুয়ারা বলে জানিয়েছেন সুজিতবাবু।শুক্রবার এলাকার ৭ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তকে সাহাজ্য প্রদান করলো ‘সদাই ফকিরের পাঠশালার, ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবার রামনগর বান্ধব সমিতির মুক্ত মঞ্চে একটি অনুষ্ঠান করে রামনগর গ্রামের ছোটন থান্দার,দ্বারিয়া পুরের বর্ষা মাল,দীননাথপুরের সঙ্গীতা টুডু,রামনাগরের উৎসুক মিত্র,শ্রীকৃষ্ণ পুরের ইয়াসিন সেখ,ও গেঁড়াই গ্রামের মারিয়াম খাতুন,ও মালিয়ারা গ্রামের কাজল মাজি, এই সাত জন শিশুর মা বাবার হাতে পাঁচ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়। এদিন ওয় সাত শিশুকে ফুলের তোরা, খেলনা, কম্বল, জামা,প্যান্ট,টুপি ও মিষ্টির প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। সুজিত বাবু বলেন,আমার ছাত্র-ছাত্রীরা সকলেই গরীব ঘরের তাই আমি ওদের কাছে কোন বেতন নিয় না। বলেছিলাম এই থ্যালাসেমিয়াদের জন্য কিছু করতে।তারপর  আমার পড়ুয়ারা বিভিন্ন গ্রামে থ্যালাসেমিয়ার সচেতনতার প্রচার চালায়। আর সেসময় অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।  তাঁর প্রত্যেকটি ছাত্রছাত্রী নিজেরা ১০০ টাকা করে দিয়ে গতবছর ৬ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের হাতে ৫ হাজার করে তুলে দিয়েছে। এই বছর এলাকার সাত জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের হাতে ৫ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়েছে।  পাশাপাশি এবছর  কাটোয়ার প্রচেষ্টা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংঠগনের পক্ষ থেকে উপহার তুলে দেওয়া হয়। ও যাদবপুরের গুড টার্না চ্যারিটেবল ট্রাস্ট  নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে প্রত্যেক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর হাতে বিভিন্ন বেবি ফুড জামা,প্যান্ট,চকলেট ও নগদ দুহাজার টাকা করে আর্থিক সাহ্যায্য প্রদান করা হয়। ও দমদম প্রত্যশা জীবন এর পক্ষ থেকে দু হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।

             ছবি - আব্বাস আলি





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।