শিক্ষাদানের পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কাজেও এগিয়ে আসেন বারবার। আউশগ্রামের রামনগর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায়কে এক ডাকে সকলেই চেনেন।
শুক্রবার রামনগর গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল এই সাহায্য। শিক্ষক জীবন থেকে অবসর গ্রহনের পর শুরু করেন টিউশন পড়ানো। তবে ছাত্র ছাত্রীদের পড়ানোর জন্য নেন বছরে গুরুদক্ষিনা হিসাবে ২ টাকা। বর্তমানে তাঁর ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ৩০০ র বেশি। তাঁর পাঠশালার নাম ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা,। এই পাঠশালা পড়ুয়ারা সবাই ১০০ টাকা করে তাদের মাস্টারমশাইয়ের হাতে তুলে দেন। বাকি টাকা সুজিতবাবু দিয়েছেন নিজের পেনশন থেকে। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের অনেকেও সুজিতবাবুর এই মহৎ উদ্যোগের শরিক হয়েছেন। শুরু টা হয়েছিল ২০১৬ সালে। রামনগর গ্রামে ছোটন থান্দার নামে বছর ছয়েকের এক শিশু থ্যালাসেমিয়াই আক্রান্ত হয়েছিল। সেই বছর ডিসেম্বর মাসে ছাত্র ছাত্রীদের পিকনিক করার কথা ছিল। কিন্তু ছাত্র -ছাত্রীরা পিকনিক না করে মাষ্টার মশাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিলেন পিকনিকের ২৫ হাজার টাকা। সেই টাকা তুলে দেওয়া হয়েছিল রামণগর গ্রামের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু ছোটন থান্দারের মায়ের হাতে। সময় বেড়েছে সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। তারপর ২০১৮ সালে ছাত্র ছাত্রীরা পাশের গ্রামে আরো দুজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তের খবর পায় সুজিত বাবু। কয়েকবছর যাবৎ সুজিতবাবুর উদ্যোগে শুরু হয়েছে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা শিবির ও আক্রান্তদের সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা। প্রতিবছর সরস্বতী পুজোর পরে একটি দিন ঠিক করে এই শিবিরের আয়োজন করা হয়। শিবিরের সমস্ত ব্যবস্থাপনা করে পড়ুয়ারা বলে জানিয়েছেন সুজিতবাবু।শুক্রবার এলাকার ৭ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তকে সাহাজ্য প্রদান করলো ‘সদাই ফকিরের পাঠশালার, ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবার রামনগর বান্ধব সমিতির মুক্ত মঞ্চে একটি অনুষ্ঠান করে রামনগর গ্রামের ছোটন থান্দার,দ্বারিয়া পুরের বর্ষা মাল,দীননাথপুরের সঙ্গীতা টুডু,রামনাগরের উৎসুক মিত্র,শ্রীকৃষ্ণ পুরের ইয়াসিন সেখ,ও গেঁড়াই গ্রামের মারিয়াম খাতুন,ও মালিয়ারা গ্রামের কাজল মাজি, এই সাত জন শিশুর মা বাবার হাতে পাঁচ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়। এদিন ওয় সাত শিশুকে ফুলের তোরা, খেলনা, কম্বল, জামা,প্যান্ট,টুপি ও মিষ্টির প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। সুজিত বাবু বলেন,আমার ছাত্র-ছাত্রীরা সকলেই গরীব ঘরের তাই আমি ওদের কাছে কোন বেতন নিয় না। বলেছিলাম এই থ্যালাসেমিয়াদের জন্য কিছু করতে।তারপর আমার পড়ুয়ারা বিভিন্ন গ্রামে থ্যালাসেমিয়ার সচেতনতার প্রচার চালায়। আর সেসময় অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁর প্রত্যেকটি ছাত্রছাত্রী নিজেরা ১০০ টাকা করে দিয়ে গতবছর ৬ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের হাতে ৫ হাজার করে তুলে দিয়েছে। এই বছর এলাকার সাত জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের হাতে ৫ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এবছর কাটোয়ার প্রচেষ্টা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংঠগনের পক্ষ থেকে উপহার তুলে দেওয়া হয়। ও যাদবপুরের গুড টার্না চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে প্রত্যেক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর হাতে বিভিন্ন বেবি ফুড জামা,প্যান্ট,চকলেট ও নগদ দুহাজার টাকা করে আর্থিক সাহ্যায্য প্রদান করা হয়। ও দমদম প্রত্যশা জীবন এর পক্ষ থেকে দু হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।
ছবি - আব্বাস আলি